ক্রাইম রিপোর্টার-মোঃ আলামীনঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, চাঁদপুর কার্যালয় থেকে সদ্য জামালপুরে বদলির আদেশ পাওয়া ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (এডি) একেএম দিদারুল আলমের অপকর্মের লিস্ট ক্রমেই বড় হচ্ছে। সম্প্রতি চাঁদপুরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছায় ভুক্তভুগী মিথ্যা মামলার আসামীর মেয়ে বলেন,২৩ অক্টবর রাতে আমার মাকে মিথ্যা মাদক মামলায় আটক করে (এডি) একেএম দিদারুল আলম।ভুক্তভুগীর মেয়ে দৈনিক মতপ্রকাশ এর প্রতিনিধিকে জানান,২৩ অক্টবর সকাল আনমানিক ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আমার মাকে আটক করে রেখে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করেন।
আমার মা (এডি) একে এম দিদারুল ইসলামের প্রস্তাবে রাজি না হবার কারণে আমার মা (রাজিয়া বেগম) কে ৪০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে মিথ্যে ও বানোয়াট মামলা দাখিল করে কোর্টে প্রেরণ করেন।সেখান থেকে আমার মাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ২৯ অক্টবরে মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর এর প্রধান কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করি। আমরা পরিবার নিয়ে এখন আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।তাকে আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচার দাবির কামনা করছি। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রধান কার্যালয় হতে অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়ান্দা) মোঃ আল-আমিন চাঁদপুর এসে দিদারুলের বিরুদ্ধে তদন্তে নামেন। ভুক্তভুগী নারীর কন্যা লিখিত অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণসহ, এডি দিদারুলের চাঁদপুরে নানা অপকর্মের কারণে তাকে চাঁদপুর থেকে জামালপুরে বদলি করা হয় এবং এই বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করে দিদারুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও আশ্বাস দেয়া হয়।
ভুক্তভোগী নারীর কন্যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব বরাবর এক লিখিত অভিযোগ পত্র উল্লেখ করেন,মিথ্যা হয়রানীমূলক মামলার আসামীর বড় বোন ও তার ছোট বোন দুজনই এডি দিদারুলের লালসার স্বীকার হয়েছেন।নানা সময়ে কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার মা ভাইকে মাদক দিয়ে ধরিয়ে মামলা দেওয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছেন দিদারুল। এর আগে নওগাঁ’তে আফসানা মিমি নামে এক কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীকে ধরার পর অফিস স্টাফদের বাইরে বের করে তার সাথে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পর তাকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে দিদারুলের বিরুদ্ধে পাঠানো, নওগাঁর স্থানীয় এলাকাবাসীর ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ৩৫৯ পিস ইয়াবাসহ ধরে নিয়ে আফাসানা মিমির সাথে অনৈতিক কাজ করে ছেড়ে দেন তিনি। এবং পরে তার সাথে সখ্যতা গড়েন। পরবর্তীতে তার বৃদ্ধ মা-বাবাকে ধরে নিয়ে এসে ঘটনার ধামা চাপা দেন এডি দিদারুল আলম। এছাড়াও হবিগঞ্জে জমি দখল ও ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। লক্ষ্মীপুরে ফার্মেসী দোকানদারকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিবে বলে চার লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ আছে।
ঢাকার ডেমরাতে মিজান নামের এক ভুক্তভোগীর জমি স্থানীয় ক্যাডার বাহিনী দিয়ে দখল করেন এমন অভিযোগও আছে এই এডি’র বিরুদ্ধে। এছাড়া এডি একেএম দিদারুল আলমের চাঁদপুরের প্রতি রয়েছে বিশেষ প্রেম। তিনি চাঁদপুরে প্রথম যোগদান করেন ০৬ এপ্রিল ২০২০ এবং অপকর্মের দায়ে তাকে বদলি করা হয় ২০২১ সালের নভেম্বর ১০ তারিখে। দিদারুল চাঁদপুরে দ্বিতীয় বারের মতো যোগদান করেন ২০ জুন ২০২৩ ইং এবং নারী ও অপকর্মের দায়ে তাকে আবারো বদলি করা হয় ০৩ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে। মজার ব্যাপার হলো, প্রথমবার চাঁদপুরে আসার পর চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। ২০২১ সালের ১০ নভেম্বরের পর বদলি হয়ে চাঁদপুর ছেড়ে চলে গেলেও চাঁদপুরের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় ভাড়াকৃত বাসাটি আজও ছাড়েননি তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, চাঁদপুরে কর্মরত না থাকলেও তিনি ভাড়া বাসায় প্রায় সময়ই আসতেন।
বিভিন্ন মাদক ব্যাবসায়ীদের ডেকে মিটিং করতেন এবং বিভিন্ন সময়ে নারীদের নিয়েও রাত কাটাতেন এডি দিদারুল। উল্লেখ্য, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা একেএম দিদারুল আলম যেখানেই কর্মরত ছিলেন, সেখানেই তার বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা, মাদক ব্যবসায়ীদের থেকে মাশোয়ারা আদায়, টাকা নিয়ে আপোষ, পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অপকর্মে বাধা দেয়া, সহকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা, সহকর্মীদের থেকে ঘুষ গ্রহণসহ নানা অপকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী রাজিয়া বেগমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ তৈরি করে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (এডি) একেএম দিদারুল আলম।